"প্রবাল প্রাচীর" সেন্টমার্টিন, বাংলাদেশ।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে আমরা কম বেশি গিয়েছি। হুমায়ূন
স্যারের সেই স্বর্গীয় সুভা ছেড়াদ্বীপ, বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে ৮ বর্গ কিঃমিঃ নিয়ে যেন
সমুদ্রের প্রতিটি ঢৈউ এর সাথে মিথালি দিচ্ছে। একমাত্র প্রবাল (Coral) দ্বীপ। সবার চোখের সামনে শুধু পাথরের কারুকাজ মনে হলেও, এটি আসলে একটি
প্রাণি। বিজ্ঞানের ভাষায় নিডারিয়া পর্বের, এন্থোযোয়া শ্রেণীর একটি বিশেষ সামুদ্রিক
জীব। এদের দেহ ক্যালসিয়াম কার্বনেটের মাধ্যমে গঠিত যার কারনে এরা পাথুরে আকার ধারণ
করে। কিন্তু কিছু কিছু প্রবাল প্রজাতি নরম, স্পঞ্জ এর মত হয়ে থাকে।
এরা সাধারণত উপকূলীয় স্বচ্ছ পানিতে
প্রাবাল কলোনি বা প্রবাল প্রাচীর তৈরি করে উপকূলকে রক্ষা করে। এদের একটা দেহ অংশকে
“পলিপ” খন্ড বলা হয়, যা গ্যামেট তৈরির মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। তাদের নিজস্ব কিছু
আত্নরক্ষার জন্য কর্ষিকা (ট্যান্টাকল) আছে , শিকারি প্রাণিদের গায়ে এটি তীরের মত ছুড়ে
দিয়ে অজ্ঞান করে দিতে পারে।
তবে এই প্রবালগুলো এক এক রঙের হয়ে
থাকের। এই মজার রহস্য হল, এর দেহে মিথস্ক্রিয়ভাবে বসবাসকারি কিছু (জুজেন্থ্যালা
নামক) শৈবাল,যারা সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। শৈবাল এর প্রয়োজনীয়
কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন যোগান দেয় প্রবাল, আর অক্সিজেন, খাদ্য সরবারহ করে
শৈবাল। শৈবালের বিভিন্ন রঙের জন্য প্রবালের রঙ ভিন্ন হয়।
প্রবাল প্রাচীর শুধু সামুদ্রিক
প্রাণিই নয়, এটি অন্যান্য প্রাণির আবাসস্থল, চারণভূমি, অভয়াশ্রম, খাদ্য সরবারহের
গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি পৃথিবীর ২৫%
মাৎস্যক্ষেত্র উৎপাদনে সহায়তা করে। সামুদ্রিক পরিবেশ সুন্দর ও সুস্থ রাখতে এর
ভূমিকা অপরিসীম।
কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ,সামুদ্রিক
দূষণ, নৌকার নোঙর, দর্শকদের অসচেতনতা, প্রবাল পাচার ইত্যাদি কারনে এর সংখ্যা দিন
দিন কমে যাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর “গ্রেট বেরিয়ার রিফ” ২৩০০ কিঃমিঃ
যার ৮০% প্রবাল ধ্বংস হয়ে গেছে এখনই। কিন্তু প্রবাল বছরে মাত্র ১-২ সেঃমিঃ বাড়তে
পারে। বৈশ্বকি উষ্ণায়ণের ফলে "প্রবাল বিবর্ণ"
(Coral Bleaching) এর কারনে প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আমাদের সেন্টমার্টিন এর প্রবাল
ধ্বংসের পথে। কারন আমরা কখনো আসল প্রবাল দেখতে পারিনা।
0 Response to ""প্রবাল প্রাচীর" সেন্টমার্টিন, বাংলাদেশ।"
Post a Comment