উপকূলের পরিবেশ পরিচিত পর্ব- 3


মোহনাঃ
                                নদী পরিভ্রমণ করে যে স্থানে  সাগরের সাথে মিশেছে সেটা হল মোহনা।মোহনা হল নদী ও সাগরের মিলনস্থলসাধারণত নদীর মিঠা পানি ও সমুদ্রের উচ্চ লবণাক্ত পানি মিলিত হয়ে, মোহনায় ঈষৎ লবণাক্ত পানির মিশ্রণ তৈরি করে। মোহনা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল।এখানে উৎপাদক থেকে শুরু করে ১ম ,২য়, ৩য় ও সর্বভুক স্তরের খাদক পাওয়া যায়।এছাড়া অসংখ্য মাটির নিচের প্রাণী ও বিয়োজকের অভয়াশ্রয় এই মোহনা
উৎপত্তি অনুসারে মোহনাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। (১) নিচু নদী উপত্যকা (ডাওন রিভার ভ্যালী)।(২) বাঁধবিত্তিক মোহনা।(৩) গভীর খাঁদ বিশিষ্ট মোহনা।(৪) টেকটনিক প্লেট ।
সমুদ্রের পানির মিশ্রণের উপর ভীত্তি করে আরও চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ (১) ঈষৎ লবণাক্ত।(২) আংশিক লবণাক্ত (৩) লবণাক্ত মোহনা (৪) বিপরীত স্রোত মোহনা।

ম্যানগ্রোভ বনঃ  
                                উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা সহ্য করার উদ্ভিদকুল নিয়ে যে বন গঠিত হয় তাকে ম্যানগ্রোভ বলে। বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন হল সুন্দরবন।ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ এর বৈশিষ্ট্য এরা সমুদ্রের মোহনা বা লবণাক্ত পানির জোয়ার ভাটা অঞ্চলে জন্মে থাকে।“রাইজোপোরা” হল ম্যানগ্রোভ বনের প্রধান উদ্ভিদ।বাংলাদেশের সুন্দরবন ২২’৩২’’ উওর ও ৮৯’০৫’’ পূর্বে অবস্থিত।এর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ,পূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগ, উত্তরে রাজশাহী বিভাগ এবং পশ্চিমে ভারতের সুন্দরবন। ভারত সীমান্তে সুন্দরবন প্রায় ৬০ ভাগ আর বাকি ৪০ ভাগ বাংলাদেশের।“সুন্দরি” নামক উদ্ভিদ থেকে এর নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে সাতক্ষীরা , খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলজুড়ে এর অবস্থান। “সুন্দরি ছাড়াও বাইন,কালো বাইন,সাদা বাইন,পশুর,গজারি ও গোলপাতা হল প্রধান বৃক্ষ।আর পশুর রাজা “রয়েল বেঙ্গল টাইগার” এই এলাকায় রাজত্ব করে আসছে যুগ যুগ ধরে।তবে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ায় এদের সংখ্যা প্রায় ১০০ তে নেমে এসেছে।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • Twitter
  • RSS

উপকূলের পরিবেশ পরিচিত পর্ব- 2


সৈকতঃ
                                সমুদ্র উপকূল রেখার যে স্থলভাগে সমুদ্রের ঢৈউ বা জল আছড়ে পড়ে সেই স্থানকে সমুদ্রসৈকত বলে।সাধারণত উপকূলের যে অঞ্চলে জোয়ার-ভাটা সংগঠিত হয় সেটাই সৈকত নামে পরিচিত।এটি সাধারণত আলগা জড়পদার্থ,যেমনঃ বালি, শিলা, নুড়ি, বালু, কাকর প্রভৃতি বস্তু দিয়ে তৈরি হয়।কিছু স্থানে জীবজন্তুর মাধ্যমে যেমন, প্রাণীর খোলস, কঙ্কাল, দাঁত এবং কোরাল দিয়ে বিশেষ সমুদ্রেসৈকত গঠিত হয়।সৈকত তিন প্রকার।যেমনঃ বালির সৈকত, পাথুরে সৈকত, এবং  কাদার সৈকত।বাংলাদেশে তিন ধনের সমুদ্রসৈকত দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার একটি বালির সৈকত।সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ পাথুরে সৈকত। এছাড়া কুতুবদিয়া কাদার সৈকত।


বদ্বীপঃ
                            নদীর মোহনায় কর্দম, পলি ও বালির সঞ্চয়ে ত্রিকোণাকার মাত্রাহীন “ব” অক্ষরের মতো সমুদ্ররেখা থেকে যে উচু স্থলভাগ গঠিত হয় তাকে বদ্বীপ বলে।নদী ও সাগরের মিলনস্থল মোহনায় নদীর স্রোতের বেগ এতই হ্রাস পায় যে, নদীবাহিত পলল তলানী আর পরিবাহিত হতে না পেরে মোহনায় সঞ্চিত হয় এবং চর জেগে ওঠার ফলে নদীস্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে চরের দুই পাশ দিয়ে প্রাবাহিত হয়।এতে চরের দুইপ্রান্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ত্রিকোণাকার আকৃতি গঠন করে। উপকূল ঢালু বা নদীস্রোতকে বাঁধা প্রদান করার মত সমুদ্রস্রোত পর্যাপ্ত শক্তিসম্পন্ন না হলে বদ্বীপ গঠিত হবে না।বদ্বীপ গঠনকালে প্রথমে মোটা পলিকণা এবং পরে সুক্ষকণাসমূহ স্থির হয়।


বঙ্গীয় বদ্বীপঃ
                                হিমালয় হতে আগত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদীর অববাহিকায় বিপুল পরিমান পলি বয়ে এনে বাংলাদেশ বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ এই বাংলাদেশ। হিমালয়ের বরফ গলিত পানি চীন,নেপাল,ভারত দিয়ে বয়ে আসে ,অজস্র পলি ,বালি,কাঁকড় নিয়ে আসে।যা সময়ের পরিক্রমায় পতিত হয়ে বঙ্গভূমি গঠিত হয়েছে।

দ্বীপঃ 
               চতুর্দিকে জল দ্বারা পরিবেষ্টিত স্থলভাগকে দ্বীপ বলে আর নিকটবর্তী একাধিক দ্বীপগুচ্ছকে একত্রে দ্বীপপুঞ্জ বলেদ্বীপ প্রধানত দুই রকমের হয় -- মহাদেশীয় দ্বীপ এবং মহাসাগরীয় দ্বীপএছাড়া কৃত্রিম দ্বীপও রয়েছে
ভূত্বক পরিবর্তনের কারনে দ্বীপ সৃষ্টি হতে পারে, যেমন মোহনার পরিবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে, অথবা প্রবাল সঞ্চিত হয়ে এছাড়া টেকটনিক প্লেট এর স্থান্তরের ফলে সমুদ্র তলদেশের মাটি কিংবা লাভা উপরে উঠে এসে দ্বীপ গঠন করতে পারে
বাংলাদেশে মোট দ্বীপ সংখ্যা ৬০টিদক্ষিণ তালপট্টি ছিল বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণের দ্বীপএছাড়া পূর্বে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটি এবং একমাত্র প্রবাল দ্বীপএটি লম্বায় প্রায় বর্গ কি.মি চওড়া কোথাও ৭০০ মিটার আবার ২০০ মি
বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা হল ভোলাভোলায় অসংখ্য দ্বীপ গড়ে উঠেছে
দক্ষিণ-পূর্বে একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীএই দ্বীপে পাহাড়ের সমারহ হিন্দুদেরবদ্যনাথ মন্দিরএখানে অবস্থিত
মহাদেশীয় দ্বীপঃ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশকে অনেক সময় বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ বলা হয় কারন এর চারদিক মহাসাগর বেষ্টিত কিন্তু দ্বীপের দিক দিয়ে উওর আমেরিকার গ্রিনল্যান্ড সর্ববৃহত্তর
এবং সবচেয়ে ছোট দ্বীপ "বিশ্বপ পাথর" (bishop rock) ইউরোপের পশ্চিম প্রান্তের চিলিয়ে আইস্লে অঞ্চলে, এছাড়া "caye chapel" দ্বীপ আমেরিকার বেলজি অঞ্চলে অবস্থিত


অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র হল ইন্দোনেশিয়াপ্রায় ১৭,৫০৮-১৮,৩০৬ টি দ্বীপ রয়েছেসরকারিভাবে ,৮৪৪টি দ্বীপের নিবন্ধন আছে, যার মাঝে ৯০০ টির বেশি বসবাস অযোগ্য

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • Twitter
  • RSS

উপকূলের পরিবেশ পরিচিত পর্ব- ১

বাংলাদেশের উপকূলঃ  


বাংলাদেশের আয়তন , ৪৭,৫৭০ বর্গ কিঃ মিঃ বর্তমান জনসংখ্যা ১৭ কোটি জনসংখ্যার বসবাস বাংলাদেশের উপকূলীয় তটরেখার দৈর্ঘ্য ৭১০ কিঃ মিঃদেশের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ এলাকা নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চল এই বিশাল তটরেখায় বসবাস করে কোটির উপরে মানুষ এখানকার সমুদ্র, নদী বেশিষ্টি ভূমিতে বসবাসরত জনগণের অন্যতম জীবিকা হলো, কৃষি মৎস্য আহরণএই উপকূল এলাকা সংকট সম্ভাবনার অঞ্চল হিসাবে পরিচিত এখানে ঘূর্ণিঝড়, জলেচ্ছাস, নদী ভাঙন এর মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ এর ঝুঁকি যেমন বেশি, তেমনি অর্থনৈতিক সম্ভবনাও রয়েছে প্রচুর
বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে জোয়ার ভাটার প্রভাব,নোনা পানির অনুপ্রবেশ এবং ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, এই ধরণের প্রভাবযুক্ত ১৯টি জেলার ১৪৭টি উপজেলা উপকূলীয় ভূমি হিসাবে অন্তভূক্ত এর মধ্যে উপকূলীয় ১৪৭টি উপজেলার মধ্যে ৪৮টি উপজেলা নানান প্রাকৃতিক কারণে ঝুকিপূর্ণবঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এই উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা হচ্ছে ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ তার মধ্যে ৪৯ শতাংশ মহিলা এই অঞ্চলের প্রচুর সম্পদ থাকা সত্বেও দারিদ্র অপেক্ষাকৃত বেশী জনসংখ্যার ৫২শতাংশ দরিদ্র এবং ২৫ শতাংশ চরম দরিদ্র মাথা পিছু আয় ১ ডলারের নিচে জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ ১৫ বছর বয়সের নিচে কৃষি শ্রমিক, ক্ষুদ্র কৃষক, জেলে এবং শহর এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৬৮ লক্ষ ৫০ হাজার এর মধ্যে মোট জনসংখ্যার ৭১ শতাংশ যায়দেশের এই এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল কে ঘিরেই মুলতঃ অর্থনৈতিক বৈদেশিক আমদানী ও রপ্তানি বানিজ্য পরিচালিত হয়ে থাকে

উপকূলঃ


         সমুদ্র উপকূল হল স্থলভাগ ও জলভাগের মিলনস্থল।স্থলভাগ ও জলভাগকে বিভক্তকারী রেখাকে উপকূলীয় রেখা বলে।উপকূলীয় অঞ্চল উপকূলীয় রেখা থেকে সমুদ্রের দিকে একটি বলয় জুড়ে বিস্তৃত্ব।ভূপ্রাকৃতিক অবস্থার উপর উপকূলীয় অঞ্চলের গঠন ও আকার নির্ভর করে থাকে।উপকূলীয় রেখা দুই প্রকার।একটি সামুদ্রিক প্রক্রিয়ার দ্বারা যেমন, তরঙ্গের দ্বারা ক্ষয়সাধন, পলি সঞ্চয় অথবা সামুদ্রিক জীব ও উদ্ভিদের প্রভাবে এবং দ্বিতীয়টি গঠিত হয় প্রধানত ভূভাগে ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন, আগ্নেয় অগ্ন্যুৎপাতে ও ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট উপকূল।ভূ-আন্দোলনে সমুদ্র উপকূলের উত্থান বা পতনের ফলে ভূভাগের পরিবর্তন লক্ষনীয়।মাঝে মাঝে এই দুই প্রকারের উপকূলীয় ভূপ্রকৃতি দেখা যেতে পারে। ( সূত্রঃ আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞান)
  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • Twitter
  • RSS