উপকূলের পরিবেশ পরিচিত পর্ব- 2
সৈকতঃ
সমুদ্র উপকূল
রেখার যে স্থলভাগে সমুদ্রের ঢৈউ বা জল আছড়ে পড়ে সেই স্থানকে সমুদ্রসৈকত বলে।সাধারণত
উপকূলের যে অঞ্চলে জোয়ার-ভাটা সংগঠিত হয় সেটাই সৈকত নামে পরিচিত।এটি সাধারণত আলগা
জড়পদার্থ,যেমনঃ বালি, শিলা, নুড়ি, বালু, কাকর প্রভৃতি বস্তু দিয়ে তৈরি হয়।কিছু
স্থানে জীবজন্তুর মাধ্যমে যেমন, প্রাণীর খোলস, কঙ্কাল, দাঁত এবং কোরাল দিয়ে বিশেষ
সমুদ্রেসৈকত গঠিত হয়।সৈকত তিন প্রকার।যেমনঃ বালির সৈকত, পাথুরে সৈকত, এবং কাদার সৈকত।বাংলাদেশে তিন ধনের সমুদ্রসৈকত
দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার একটি বালির সৈকত।সেন্ট-মার্টিন
দ্বীপ পাথুরে সৈকত। এছাড়া কুতুবদিয়া কাদার সৈকত।
বদ্বীপঃ
নদীর
মোহনায় কর্দম, পলি ও বালির সঞ্চয়ে ত্রিকোণাকার মাত্রাহীন “ব” অক্ষরের মতো
সমুদ্ররেখা থেকে যে উচু স্থলভাগ গঠিত হয় তাকে বদ্বীপ বলে।নদী ও সাগরের মিলনস্থল
মোহনায় নদীর স্রোতের বেগ এতই হ্রাস পায় যে, নদীবাহিত পলল তলানী আর পরিবাহিত হতে না
পেরে মোহনায় সঞ্চিত হয় এবং চর জেগে ওঠার ফলে নদীস্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে চরের দুই
পাশ দিয়ে প্রাবাহিত হয়।এতে চরের দুইপ্রান্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ত্রিকোণাকার আকৃতি গঠন
করে। উপকূল ঢালু বা নদীস্রোতকে বাঁধা প্রদান করার মত সমুদ্রস্রোত পর্যাপ্ত
শক্তিসম্পন্ন না হলে বদ্বীপ গঠিত হবে না।বদ্বীপ গঠনকালে প্রথমে মোটা পলিকণা এবং পরে
সুক্ষকণাসমূহ স্থির হয়।
বঙ্গীয় বদ্বীপঃ
হিমালয় হতে আগত
গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদীর অববাহিকায় বিপুল পরিমান পলি বয়ে এনে বাংলাদেশ
বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ এই বাংলাদেশ। হিমালয়ের বরফ গলিত পানি চীন,নেপাল,ভারত
দিয়ে বয়ে আসে ,অজস্র পলি ,বালি,কাঁকড় নিয়ে আসে।যা সময়ের পরিক্রমায় পতিত হয়ে
বঙ্গভূমি গঠিত হয়েছে।
দ্বীপঃ
চতুর্দিকে জল দ্বারা পরিবেষ্টিত স্থলভাগকে দ্বীপ বলে। আর নিকটবর্তী একাধিক দ্বীপগুচ্ছকে একত্রে দ্বীপপুঞ্জ বলে।দ্বীপ প্রধানত দুই রকমের হয় -- মহাদেশীয় দ্বীপ এবং মহাসাগরীয় দ্বীপ।এছাড়া কৃত্রিম দ্বীপও রয়েছে।
ভূত্বক পরিবর্তনের কারনে দ্বীপ সৃষ্টি হতে পারে, যেমন মোহনার পরিবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে, অথবা প্রবাল সঞ্চিত হয়ে। এছাড়া টেকটনিক প্লেট এর স্থান্তরের ফলে সমুদ্র তলদেশের মাটি কিংবা লাভা উপরে উঠে এসে দ্বীপ গঠন করতে পারে।
বাংলাদেশে মোট দ্বীপ সংখ্যা ৬০টি।দক্ষিণ তালপট্টি ছিল বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণের দ্বীপ।এছাড়া পূর্বে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটি এবং একমাত্র প্রবাল দ্বীপ।এটি লম্বায় প্রায় ৮ বর্গ কি.মি। চওড়া কোথাও ৭০০ মিটার আবার ২০০ মি।
বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা হল ভোলা।ভোলায় অসংখ্য দ্বীপ গড়ে উঠেছে।
দক্ষিণ-পূর্বে একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী।এই দ্বীপে পাহাড়ের সমারহ। হিন্দুদের “বদ্যনাথ মন্দির” এখানে অবস্থিত।
মহাদেশীয় দ্বীপঃ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশকে অনেক সময় বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ বলা হয়। কারন এর চারদিক মহাসাগর বেষ্টিত। কিন্তু দ্বীপের দিক দিয়ে উওর আমেরিকার গ্রিনল্যান্ড সর্ববৃহত্তর।
এবং সবচেয়ে ছোট দ্বীপ "বিশ্বপ পাথর" (bishop rock) ইউরোপের পশ্চিম প্রান্তের চিলিয়ে আইস্লে অঞ্চলে, এছাড়া "caye chapel" দ্বীপ আমেরিকার বেলজি অঞ্চলে অবস্থিত।
অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র হল ইন্দোনেশিয়া।প্রায় ১৭,৫০৮-১৮,৩০৬ টি দ্বীপ রয়েছে।সরকারিভাবে ৮,৮৪৪টি দ্বীপের নিবন্ধন আছে, যার মাঝে ৯০০ টির বেশি বসবাস অযোগ্য।
0 Response to "উপকূলের পরিবেশ পরিচিত পর্ব- 2"
Post a Comment